জন্ম-মৃত্যুর পুনরাবর্তের উর্ধ্বে অধিষ্ঠিত সচ্চিদানন্দ স্তর সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের অনুসন্ধিৎসার স্ফুলিঙ্গ এখনও যাদের মধ্যে রয়েছে, মুনিবর তাদের জন্য করুণা করে কালজয়ী বৈদিক জ্ঞানসম্ভার সঙ্কলন করেছিলেন, সংস্কৃত শ্লোকগীতি, ইতিহাস, পুরাণাদি, নীতিশাস্ত্র, বিজ্ঞান ও দর্শন বিষয়ক বহু খন্ড গ্রন্থরাজির মাধ্যমে। ব্যাসদেবের কর্মকৃতীর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ নিদর্শন হলাে শ্রীমদ্ভাগবত । ভাগবতের প্রকৃত শিক্ষার্থীর হৃদয়ে শ্রীকৃষ্ণের প্রতি তার অন্তর্নিহিত ভক্তিভাবের প্রেমােল্লাস পুনরুজ্জীবিত হয়ে ওঠে এবং জড়জাগতিক পরিবেশ থেকে চিন্ময় চেতন সত্ত্বার রাজ্য গােলক ধামে সে অধিষ্ঠিত হয়, যেখানে ভগবানের একান্ত অন্তরঙ্গ রূপলীলা প্রকরাদি প্রকটিত হয়।

তবে ব্যাসদেবের অপ্রাকৃত পারমার্থিক বাণী হৃদয়ঙ্গম করা শুষ্ক পুঁথিগত বিদ্যাচর্চা কিংবা বুদ্ধিবৃত্তির কলাকৌশলের কর্ম নয় । ভাগবত বা বৈদিক শাস্ত্রের যথার্থ শিক্ষার্থী তার অন্তর মাঝে প্রকৃত উপলব্ধির বিকাশ ঘটাতে চাইলে আগে তাকে অবশ্যই ব্যাসদেবের আশীর্বাদধন্য হতেই হবে। তাই শ্রীমদ্ভাগবতের নির্দেশ এই যে, ভাগবত পাঠ শুরু করার আগে শ্রীব্যাসদেবের উদ্দেশ্যে অবশ্যই সশ্রদ্ধ প্রণতি জ্ঞাপন করতে হবে। এখন প্রশ্ন হতে পারে, “পাঁচ হাজার বছর আগে যিনি ছিলেন, সেই মানুষটির আশীর্বাদ আজ কেমন। করে মানুষ পেতে পারে?” ভগবানের অবতার শ্রীল ব্যাসদেব প্রত্যেকেরই অন্তর মাঝে অবস্থিত, তিনি পরমাত্মা হতে ভিন্ন নন। তাই তিনি যে কোন মানুষের হৃদয়াভ্যন্তর থেকেই পারমার্থিক জ্ঞান প্রদান করতে পারেন, শ্রীব্যাসদেব সেই ভাবেই ভিন্ন নন। তাঁর রচনা হতে; আজও যারা শাস্ত্রের চোখ দিয়ে সবকিছু দেখেন, তারা তার প্রত্যক্ষ পথনির্দেশ আশীষধন্য হয়েই থাকেন। আর শ্রীব্যাসদেব যেহেতু এখনও সুউচ্চ হিমালয় পর্বতমালার উত্তরে বদরিকাশ্রমে অধিষ্ঠিত আছেন, তাই ব্রহ্ম-সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা-আচার্য শ্রীমধ্বের মতাে মহান ভক্তজনেও তাঁকে খুঁজে পেতে এবং তার প্রত্যক্ষ আশীর্বাদ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন ।

কিন্তু আমাদের অনেকেরই ক্ষেত্রে, শ্রীল মধ্বাচার্য, শ্রীল মাধবেন্দ্রপুরী এবং শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর গুরু-শিষ্য পরম্পরাক্রমে শ্রীব্যাসের বর্তমান প্রতিনিধি স্বরূপ আমাদের পারমার্থিক দীক্ষাগুরুর কাছ থেকেই শ্রীব্যাসের আশীর্বাদ পেতে হবে । হৃদয়ের অভ্যন্তরে ব্যাসদেবের পরামর্শ-উপদেশ ধারণ করতে হলে যে নির্মলতা প্রয়ােজন, কামনাদির মলিনতার ফলে আমাদের হৃদয় তা থেকে অনেকটা দূষিত হয়ে পড়েছে এবং তার বাণী (বৈদিক শাস্ত্রাদি) শুধুমাত্র পাঠচর্চার মাধ্যমে আমরা সরাসরি তা উপলব্ধি করতে পারি না, আমাদের অতীব দুর্বল মানসিকতার ফলে । বদ্রীনাথের তুষারময় স্তুপের ওপর যে তাঁর দর্শন আমাদের কারও পক্ষে পাওয়া প্রায় অসম্ভব, তা সুনিশ্চিত, তবে শ্রীব্যাসের বাণী বিশ্বব্যাপী সম্প্রচারের শক্তিধন্য আচার্যের বপু দর্শন এবং বাণী শ্রবণের মাধ্যমে শ্রীব্যাসেরই দর্শন ও বাণী শ্রবণের সার্থকতা অর্জিত হয়ে থাকে।

মহাভারতের আদি পর্ব অনুসারে, ব্যাস’ কথাটির অর্থ ‘যিনি ব্যাপকভাবে বিস্তারিত বর্ণনা করেন। যে শুদ্ধভক্ত বৈদিক শাস্ত্রাদি ব্যাপকভাবে বর্ণনার শক্তি ধারণ করেছেন, তিনিই পরিপূর্ণভাবে আদি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাসের প্রতিনিধি রূপে প্রকট হয়েছেন । কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ সন্দেহাতীত ভাবেই আধুনিক জগতের ব্যাস তা সুপ্রমাণিত হয়েছে, শুধুমাত্র তাঁর বিপুল রচনা সম্ভার, আর প্রবচনমালার দ্বারাই নয়, সেগুলির অত্যাশ্চর্য ভাবদ্যোতক শক্তিরাশির দ্বারাও। আর স্বয়ং শ্রীল প্রভুপাদের দ্বারা আদিষ্ট হয়ে, তার শিষ্যবর্গের মধ্যে অনেকেই পৃথিবীর চতুর্দিকে জ্ঞান পরিবেশনের মাধ্যমে শ্রীল ব্যাসদেবের প্রতিনিধি স্বরূপ পারমার্থিক দীক্ষাগুরুর দায়িত্বভার গ্রহণ করছেন। আমাদের পরমারাধ্য দীক্ষাগুরু কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি শ্রীমৎ জয়পতাকা স্বামী মহারাজ যে বিশ্বস্তভাবেই শ্রীল প্রভুপাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলছেন, বিশ্বব্যাপী বেদ গ্রন্থাবলী প্রচারের কর্মযজ্ঞে তাঁর আত্মােৎসর্গের দৃষ্টান্ত থেকেই তা সর্বসমক্ষে সুপ্রমাণিত।

ব্যাসপূজা বই

পড়ুন

ব্যাসপূজা রিপোর্ট

আরো

যোগাযোগ করুন

ঠিকানা

Jayapataka Swami Archives
২য় তলা, প্রভুপাদ নিবাস, অভয় নগর, মায়াপুর, পশ্চিমবঙ্গ ৭৪১৩১৩, ভারত

কল করুন

+৯১ ৩৪৭২ ২৪৫ ২৭৭
+৯১ ৩৪৭২ ২৪৫ ২৭৭

ইমেইল করুন

info@example.com
contact@example.com

খোলা থাকবে

সোমবার - শুক্রবার